নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত ও দর্শনীয় স্থান
নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত? প্রশ্নটি বরাবর অনেকেই করে থাকেন। কিন্তু আমরা অনেকেই বলতে পারি না যে নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত। আজকের এই পোস্টটি থেকে আপনি নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত,বৃহত্তর নোয়াখালীর দর্শনীয় স্থান,নোয়াখালী বিখ্যাত স্থান,নোয়াখালী কি খাবারের জন্য বিখ্যাত ও নোয়াখালী জেলা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
নোয়াখালী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য
নোয়াখালী বাংলাদেশের একটি জেলা।নোয়াখালী জেলা চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে। নোয়াখালী দেশের সকল মানুষের কাছে পরিচিত। নোয়াখালী জেলা বাংলাদেশের “এ” ক্যাটাগরির একটি জেলা। তথ্য অনুযায়ী জানা যায় যে, নোয়াখালী জেলার পূর্বের নাম ছিল “ভুলুয়া“। নোয়াখালী জেলায় রয়েছে ৯টি উপজেলা ও ৯৩ টি ইউনিয়ন। এ সকল তথ্য আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে আজকে আপনাকে জানাবো কিন্তু তার আগে আমরা আপনাকে নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত এটি আগে জানাতে চাই।
নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত
বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ও কিছু স্বনামধন্য ওয়েবসাইটে তথ্য অনুসারে, নোয়াখালী তাদের ইউনিক (অদ্বিতীয়- এই ভাষাটি বাংলাদেশ ও বিশ্বের অন্য কোন দেশে পাবেন না) ভাষার জন্য। আমার মত অনেকে আছেন যারা নোয়াখালী অঞ্চলের ভাষাটিকে খুব পছন্দ করেন। এছাড়া নোয়াখালী জেলা নারকেল নাড়ু ও মরিচ খোলাজা খুব বিখ্যাত। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের পিঠার জন্য নোয়াখালী জেলা বিখ্যাত। যেমন: পাটিসাপটা পিঠা,মেরা পিঠা,ছাইন্না পিঠা ইত্যাদি। এছাড়া বাংলাদেশের বৃহত্তর নদী মেঘনা নোয়াখালী জেলায় অবস্থিত। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন যারা নোয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেছেন। তাদের জন্য নোয়াখালী জেলা বাংলাদেশ ও সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে।
নোয়াখালী নামকরণের ইতিহাস
পূর্বে ভুলুয়া ছিল নোয়াখালী জেলার প্রাচীন নাম। আর সুধারাম ছিল নোয়াখালী জেলার সদর থানার নাম। ইতিহাস গবেষক বা ইতিহাসবিদদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একবার ত্রিপুরা পাহাড় থেকে প্রবাহমান ডাকাতিয়া নদী ভুলুয়ার উওর পূর্বাঞ্চল ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়। যার ফলে জমিতে থাকা ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এই সমস্যা যাতে পুনরায় না হয় সে ক্ষেত্রে সমাধানের লক্ষ্যে পরিএানের উপায় হিসেবে ১৬৬০ সালের দিকে এই অঞ্চলে বিশাল খাল খনন করা হয়। এর ফলে পানির প্রবাহ ডাকাতিয়া নদী থেকে রামগঞ্জ, সোনাইমুড়ি ও চৌমুহনী হয়ে মেঘনা নদীতে ও ফেনী নদীতে এই পানি প্রবাহিত হয়। এরপর তখন থেকে এই বিশাল নতুন কালকের নোয়াখালী জেলার ভাষায় (আঞ্চলিক ভাষায়) নোয়া ( অর্থ-নতুন) খাল। এরপরে এই অঞ্চলটি বিভিন্ন মানুষের মুখে উচ্চারিত হতে হতে স্থানটির নাম নোয়াখালী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। আর এই নোয়াখালী বর্তমানে বাংলাদেশের একটি জেলা হিসেবে পরিচিত।
নোয়াখালী কি খাবারের জন্য বিখ্যাত
প্রতিটি অঞ্চলে কিছু খাবার থাকে, যা অন্য অঞ্চলের খাবারের থেকে সেরা হয়ে থাকে। এ সকল খাবার সর্বদা মানুষের প্রিয় হয়ে থাকে। তেমনি নোয়াখালী জেলায় রয়েছে অসংখ্য বিখ্যাত খাবার যার জন্য বাংলাদেশ ও সারা পৃথিবীতে পরিচয় দিলে লাভ করেছে। নোয়াখালী জেলার সবচেয়ে এক জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী খাবার হলো মরিচ খোলা,খোলাজা পিঠা, মেরা মিঠা,নারিকেল এর নাড়ু। আসুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই:-
খোলাজা পিঠা
খোলাজা পিঠা নোয়াখালী জেলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা। খোলাজা পিঠা নোয়াখালী জেলার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বহু বছর ধরে। দেশ বিদেশ থেকে বহু মানুষ নোয়াখালী জেলায় এসে থাকেন খোলাজা পিঠার জন্য। খোলাজা পিঠার স্বাদ অতুলনীয়।
মরিচ খোলা
মরিচ খোলা কি অনেকেই এই সম্পর্কে জানেন না। মরিচ খোলা হলো ছোট মাছ রান্না করার এক বিশেষ পদ্ধতি। মরিচ খোলা নোয়াখালী জেলায় বেশ জনপ্রিয়। এর স্বাদ অতুলনীয়।
খাইস্যা
খাইস্যা সিমের বিচি দিয়ে চিংড়ি মাছ রান্না করা এক ধরনের তরকারি। নোয়াখালী জেলার আঞ্চলিক ভাষায় একে খাইস্যা বলা হয়ে থাকে।
পিঠা
নোয়াখালী জেলায় পিঠার বেশ কদর রয়েছে। পাটিসাপটা পিঠা,মেরা পিঠা,ছাইন্না পিঠা এই অঞ্চলের সেরা ঐতিহ্যবাহী পিঠা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এছাড়া নারকেল নাড়ু, দধি এসবের দিক থেকেও নোয়াখালী জেলা এগিয়ে রয়েছে। যা নোয়াখালী জেলাকে করেছে আরও বিখ্যাত। নোয়াখালীর আঞ্চলিক কিছু খাবার রয়েছে যার স্বাদ বলতে গেলে অতুলনীয়। আপনি যদি কখনও নোয়াখালী জেলাতে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আসেন। তাহলে অবশ্যই এ সকল খাবার আপনি একবার হলেও খেয়ে দেখবেন। অনেকে নোয়াখালী জেলার আঞ্চলিক ভাষার জন্য হেলা করে থাকেন। কিন্তু আপনি নোয়াখালী জেলার মানুষের আত্মীয়তায় মুগ্ধ হয়ে যাবেন। এই জেলার মানুষ খুব আত্মীয়তা পরায়ন হয়ে থাকে।
এক নজরে বৃহত্তর নোয়াখালীর দর্শনীয় স্থান
নোয়াখালী জেলায় যে সকল দর্শনীয় স্থান রয়েছে সে সকল স্থানের নাম নিচে উপস্থাপন করা হলো:
- স্বর্ণ দ্বীপ, হাতিয়া।
- নোয়াখালী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
- নিঝুম দ্বীপ
- গান্ধী আশ্রম
- ঐতিহাসিক কেশারপাড় দীঘি
- বজরা শাহী জামে মসজিদ
- নলচিরা ঘাট
- গ্রীন পার্ক,চাতারপাইয়া বাজার সংলগ্ন, সোনাইমুড়ী
- দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা পার্ক, হাতিয়া
- নোয়াখালী জেলা জামে মসজিদ
- মহাত্মা গান্ধী জাদুঘর, জয়াগ, সোনাইমুড়ী।
- কল্যান্দী সার্বজনীন দুর্গা মন্দির
- ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, চর বাটা
- নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান।
- বজরা শাহী মসজিদ
- নোয়াখালী ড্রীম ওয়ার্ল্ড পার্ক, ধর্মপুর।
- কালের সাক্ষী কল্যান্দি জমিদার বাড়ী
- কমলার দীঘি
- মুছাপুর ক্লোজার
- বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর
- ভাষানচর
এছাড়া নোয়খালী জেলায় আরো দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এখানে কিছু দর্শনীয় স্থান সমূহের নাম কম হতে পারে। আপনি দর্শনীয় স্থান গুলোতে ভ্রমণ করার সময় সকল দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানতে পারবেন।
নোয়াখালী জেলার উপজেলা কয়টি ও কি কি?
নোয়াখালী জেলার উপজেলা সংখ্যা হল ০৯টি। নয়টি উপজেলার নাম নিচে উপস্থাপন করা হলো:
- কবিরহাট
- কোম্পানীগঞ্জ
- চাটখিল
- নোয়াখালী সদর
- সেনবাগ
- বেগমগঞ্জ
- সুবর্ণচর
- হাতিয়া
- সোনাইমুড়ি
নোয়াখালী জেলার থানার নাম
নোয়াখালী জেলায় ১০টি থানা রয়েছে। এই ১০টি থানার নাম নিচে উপস্থাপন করা হলো:
- সুধারাম মডেল থানা
- কোম্পানীগঞ্জ থানা
- চরজব্বার থানা
- চাটখিল থানা
- সোনাইমুড়ী থানা
- ভাসানচর থানা
- সেনবাগ থানা
- হাতিয়া থানা
- কবিরহাট থানা
- বেগমগঞ্জ থানা
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
প্রশ্ন: নোয়াখালী জেলার মোট আয়তন কত?
উওর: ৪২০২.৭০ বর্গ কিলোমিটার হলো নোয়াখালী জেলার মোট আয়তন।
প্রশ্ন: নোয়াখালী জেলা থেকে ঢাকা বিভাগের দূরত্ব কত কিলোমিটার?
উওর: নোয়াখালী জেলা থেকে ঢাকা বিভাগের দূরত্ব হলো ১৬০ কিলোমিটার।
প্রশ্ন: নোয়াখালী জেলা কোন বিভাগের অন্তর্গত?
উওর: চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা হচ্ছে নোয়াখালী জেলা।
প্রশ্ন: চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহর থেকে নোয়াখালী জেলার দ্রুরুত্ব কত?
উত্তর: ১৩৫ কিলোমিটার।
প্রশ্ন: পূর্বে নোয়াখালী জেলার নাম কি ছিল?
উওর: ভুলুয়া।
প্রশ্ন: নোয়াখালী জেলাতে কয়টি গ্রাম রয়েছে?
উওর: ৯৬৭টি গ্রাম রয়েছে নোয়াখালী জেলাতে।
প্রশ্ন: মুক্তিযুদ্ধে নোয়াখালী কত নম্বর সেক্টরে ছিল?
উওর: সেক্টর নং ২
প্রশ্ন: নোয়াখালী জেলার ওয়েবসাইট ঠিকানা লিংক?
উওর: https://www.noakhali.gov.bd/
শেষ কথা
আশা করি আমরা আপনাকে, নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত ও দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এসকল ধরনের লেখা পেতে সর্বদা আমাদের সাথে থাকুন। নোয়াখালী জেলা ও নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত সম্পর্কে আপনি যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আপনি কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
আরো পড়তে পারেন:
(প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আপডেট পেতে আমাদের গুগল নিউজ ও ফেসবুক পেজ এ অনুসরণ করুন)
এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।