পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে পাসপোর্ট চেক করার সহজ পদ্ধতি

আপনি যদি সম্প্রতি একটি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন এসেছে—আপনার পাসপোর্ট এখন কোন অবস্থায় আছে? ঠিক এই জায়গাতেই “পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে পাসপোর্ট চেক” করার প্রক্রিয়াটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
পাসপোর্ট আবেদনের পর অনেক সময় আমরা উদ্বিগ্ন থাকি—আবেদনটি প্রক্রিয়াধীন আছে কিনা, পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়েছে কিনা, কিংবা পাসপোর্টটি প্রিন্ট হয়ে গেছে কি না। এইসব প্রশ্নের উত্তর আপনি খুব সহজেই পেতে পারেন যদি আপনার কাছে থাকে পাসপোর্ট আবেদন সংক্রান্ত নাম্বার অথবা পাসপোর্ট নাম্বার।
বর্তমানে বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই অনলাইন পাসপোর্ট ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই জানতে পারবেন আপনার পাসপোর্টের সর্বশেষ অবস্থা। শুধু একটি সঠিক পাসপোর্ট নাম্বার থাকলেই যথেষ্ট। এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই জন্মতারিখ ও আবেদন নম্বর দিয়েও আপনি একই তথ্য জানতে পারবেন।
এই পদ্ধতিটি কেবলমাত্র সময় বাঁচায় না, বরং এটি আপনাকে নির্ভরযোগ্য ও অফিসিয়াল তথ্য দেয়, যাতে আপনি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আরও ভালোভাবে করতে পারেন। ভিজিট করার দরকার নেই আঞ্চলিক অফিসে, দাঁড়াতে হয় না দীর্ঘ লাইনে—সবকিছুই এখন অনলাইনে মাত্র কিছু ক্লিকের দূরত্বে।
আপনি যদি ভাবছেন এই প্রক্রিয়াটি জটিল, তবে চিন্তার কিছু নেই। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি ধাপে ধাপে শিখে যাবেন কীভাবে সহজভাবে পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে পাসপোর্ট চেক করবেন, এবং সেইসঙ্গে জানা যাবে আরও কিছু বিকল্প পদ্ধতি।
বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করার পদ্ধতি
বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট সেবা চালুর পর থেকে আবেদনকারীরা এখন ঘরে বসেই তাদের পাসপোর্টের অবস্থা জানতে পারছেন। আপনি যদি ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে থাকেন, তাহলে অনলাইনে স্ট্যাটাস চেক করা এখন খুবই সহজ একটি প্রক্রিয়া। এই ক্ষেত্রে, একটি নির্ভরযোগ্য এবং সরকার অনুমোদিত ওয়েবসাইট ব্যবহার করেই আপনি সঠিক তথ্য পেতে পারেন।
এই প্রক্রিয়া শুরু করতে হলে প্রথমে জানতে হবে আপনার আবেদন নম্বর। এটি সাধারণত আবেদন জমা দেওয়ার সময় আপনি যে আবেদন ফর্ম পূরণ করেছিলেন, সেখানে উল্লেখ থাকে। আপনি যদি ফিজিক্যালি আবেদন করে থাকেন, তবে স্লিপে দেওয়া নাম্বারটি প্রয়োজন হবে। আবার আপনি যদি অনলাইনে আবেদন করে থাকেন, তাহলে ই-মেইল বা প্রিন্ট কপি থেকেই সেই নম্বরটি পাওয়া যায়।
স্ট্যাটাস চেক করতে হলে আপনাকে নির্দিষ্ট একটি অনলাইন ফর্ম পূরণ করতে হবে, যেখানে আবেদন নম্বর এবং জন্মতারিখ প্রবেশ করাতে হবে। অনেকেই ভুল করে শুধু নাম বা মোবাইল নম্বর দিয়ে খুঁজে পেতে চান, কিন্তু এটি কাজ করে না। আবেদন নম্বর এবং জন্মতারিখ উভয়টাই বাধ্যতামূলক।
এই প্রক্রিয়াটি বিশেষত সময় সাশ্রয় করে এবং আবেদনকারীর মানসিক শান্তি বজায় রাখে। অনেক সময় দেখা যায়, আবেদনটি গ্রহণের পর পুলিশ ভেরিফিকেশন ধাপে বিলম্ব হয়। আপনি চাইলে মাঝেমধ্যে স্ট্যাটাস চেক করে জানতে পারেন, কোন ধাপে আপনার আবেদনটি রয়েছে—আবেদন গৃহীত হয়েছে কিনা, যাচাই চলছে কিনা, নাকি প্রিন্ট ও ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত।
এছাড়াও, আপনি যদি পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য সময় নির্ধারণ করে থাকেন, তবে সেই তারিখের আগে অনলাইনে স্ট্যাটাস দেখে নিশ্চিত হয়ে নিতে পারেন পাসপোর্টটি প্রস্তুত আছে কিনা। এতে করে সময় ও ভোগান্তি দুই-ই কমে যায়।
এই অংশে আমরা উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যবহার করলাম মূল কীওয়ার্ড—পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে পাসপোর্ট চেক—যা আপনাকে এই অনলাইন স্ট্যাটাস যাচাই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে।
ভারতীয় পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করার পদ্ধতি
আপনি যদি ভারতীয় নাগরিক হয়ে থাকেন এবং পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে থাকেন, তাহলে জানবেন যে ভারতের পাসপোর্ট সার্ভিসটি অত্যন্ত ডিজিটাল এবং ব্যবহারবান্ধব। অনলাইনের মাধ্যমে পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করার জন্য সরকারিভাবে একটি পোর্টাল চালু রয়েছে, যা সহজেই ব্যবহার করা যায়। এখানে আপনি শুধুমাত্র কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে আপনার আবেদন প্রক্রিয়ার সর্বশেষ অবস্থা জেনে নিতে পারবেন।
প্রথমত, আপনার প্রয়োজন হবে একটি ফাইল নম্বর—যা পাসপোর্ট আবেদন জমা দেওয়ার পর আপনাকে ইস্যু করা হয়। সাধারণত এটি একটি আলফানিউমেরিক কোড হয়ে থাকে, এবং আপনি এটি ফর্ম জমা দেওয়ার রশিদ বা অনলাইন প্রিন্ট কপিতে খুঁজে পাবেন। এর সঙ্গে আপনার জন্মতারিখ থাকতে হবে, যেটা সঠিকভাবে প্রবেশ করানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
স্ট্যাটাস চেক করার জন্য আপনাকে ভারতীয় পাসপোর্ট বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে। সেখানে Track Application Status নামক একটি অপশন রয়েছে। আপনি সেই অপশন নির্বাচন করে ‘Application Type’ হিসেবে ‘Passport/PCC/IC’ নির্বাচন করবেন এবং তারপর ফাইল নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে সাবমিট করলেই আপনি জানতে পারবেন আপনার আবেদন কোন ধাপে রয়েছে।
স্ট্যাটাস বিভিন্ন রকম হতে পারে—যেমন “Under Review”, “Police Verification Initiated”, “Passport Printing Initiated”, বা “Dispatched”। প্রতিটি ধাপ আপনাকে জানিয়ে দেয় আবেদনটি ঠিক কোন অবস্থায় আছে এবং আর কতটা সময় লাগতে পারে।
পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করার বিকল্প পদ্ধতি
অনেক সময় দেখা যায়, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করতে গিয়ে সার্ভার সমস্যার মুখে পড়তে হয়, অথবা আপনি সঠিক তথ্য দিতে না পারায় স্ট্যাটাস আসছে না। এই রকম পরিস্থিতিতে আপনি কিছু বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন, যার মাধ্যমে আপনার পাসপোর্টের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।
প্রথম বিকল্প পদ্ধতিটি হল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করা। আপনি যেখান থেকে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন, সেই অফিসে গিয়ে আপনি আপনার পাসপোর্ট নাম্বার বা আবেদন রশিদ দেখিয়ে বর্তমান অবস্থা জানতে পারেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আপনার তথ্য দেখে জানিয়ে দেন পাসপোর্টটি কোন পর্যায়ে আছে এবং তা কখন সংগ্রহ করা যাবে।
দ্বিতীয় বিকল্প হচ্ছে স্থানীয় থানা বা পুলিশ স্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগ। কারণ অনেক সময় পাসপোর্ট প্রক্রিয়ার একটি ধাপ হল পুলিশ ভেরিফিকেশন। যদি আপনার আবেদন ওই পর্যায়ে থাকে, তবে সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করে আপনি জানতে পারবেন ভেরিফিকেশন হয়েছে কিনা বা আদৌ সেখানে আবেদনটি পৌঁছেছে কিনা।
তৃতীয়ত, আপনি কল সেন্টার বা হেল্প ডেস্কে ফোন করে পাসপোর্টের অবস্থা জানতে পারেন। অধিকাংশ দেশের পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট হটলাইন বা হেল্পলাইন পরিচালনা করে থাকে, যেখানে ফোন করে আবেদন আইডি বা পাসপোর্ট নাম্বার বললেই আপনাকে সর্বশেষ স্ট্যাটাস জানানো হয়।
অন্য আরেকটি বিকল্প পদ্ধতি হলো SMS সেবা, যা কিছু দেশে চালু আছে। এখানে নির্দিষ্ট নম্বরে আবেদন আইডি সহ একটি নির্ধারিত ফরম্যাটে SMS পাঠালে ফিরতি মেসেজে পাসপোর্টের অবস্থা জানিয়ে দেয়া হয়। যদিও এই সেবা এখন অনেক দেশে সীমিত, তবে যেসব জায়গায় আছে, তা যথেষ্ট কার্যকর।
এই অংশেও প্রাসঙ্গিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে মূল কীওয়ার্ড—পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে পাসপোর্ট চেক—যা প্রতিটি বিকল্প প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাইয়ের একটি কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
1. পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করতে কী কী তথ্য প্রয়োজন?
আপনার পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করতে হলে সাধারণত দুটি তথ্য লাগবে:
- আবেদন নম্বর বা ফাইল নম্বর
- জন্ম তারিখ (DD/MM/YYYY ফরম্যাটে)
কিছু ক্ষেত্রে আপনি পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে পাসপোর্ট চেক করতে পারবেন, বিশেষ করে যদি পুনঃইস্যু বা ডেলিভারির স্ট্যাটাস জানতে চান। তবে মূলত আবেদন নম্বরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
2. স্ট্যাটাস চেক করার জন্য কোন ওয়েবসাইটগুলি নির্ভরযোগ্য?
প্রতিটি দেশের নিজস্ব পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। উদাহরণস্বরূপ:
- বাংলাদেশ: সরকারি ই-পাসপোর্ট পোর্টাল
- ভারত: পাসপোর্ট সেবা পোর্টাল
- মালয়েশিয়া অবস্থানরত বাংলাদেশিদের জন্য হাইকমিশনের ওয়েব পোর্টাল
এগুলো ছাড়া কোনো তৃতীয়পক্ষের ওয়েবসাইট ব্যবহার না করাই ভালো।
3. অনলাইনে স্ট্যাটাস দেখা যাচ্ছে না, তাহলে কী করব?
অনেক সময় সার্ভার সমস্যা, ভুল তথ্য বা সিস্টেম আপডেটের কারণে অনলাইনে পাসপোর্টের স্ট্যাটাস দেখা যায় না। এমন পরিস্থিতিতে আপনি করতে পারেন:
- সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে সরাসরি যোগাযোগ
- থানায় পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পর্কে খোঁজ
- কাস্টমার কেয়ার হটলাইন বা ইমেইলের মাধ্যমে সাহায্য নেওয়া
4. কতদিন পর পাসপোর্ট প্রস্তুত হয়?
এটি নির্ভর করে আপনি কোন টাইপের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন (Regular, Express বা Urgent)। সাধারণত:
- রেগুলার: ১৫-২১ কর্মদিবস
- এক্সপ্রেস: ৭-১০ কর্মদিবস
- অতিদ্রুত: ৩-৫ কর্মদিবস
তবে পুলিশ ভেরিফিকেশন বা তথ্য অসম্পূর্ণ হলে সময় বাড়তে পারে।
উপসংহার
পাসপোর্ট হচ্ছে আপনার আন্তর্জাতিক পরিচয়পত্র। এটি হাতে পাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী তথ্য জানা একান্ত প্রয়োজন। আপনি যদি বুঝতে চান আপনার আবেদন কোন অবস্থায় আছে, তাহলে “পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে পাসপোর্ট চেক” করার এই সহজ, কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য পদ্ধতিগুলো আপনাকে সত্যিই উপকারে আসবে।
অনলাইন ট্র্যাকিং সিস্টেম আপনাকে ঝামেলাবিহীন একটি অভিজ্ঞতা দেয়। শুধু সঠিক পাসপোর্ট নাম্বার, আবেদন নম্বর বা ফাইল নম্বর এবং জন্ম তারিখ দিয়েই আপনি জেনে নিতে পারেন আপনার পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা। বাংলাদেশ, ভারত বা মালয়েশিয়া—সব জায়গাতেই অনলাইন সিস্টেমের ব্যবহার বেড়েছে, যা আপনাকে সময় ও ভোগান্তি থেকে বাঁচায়।
যদি অনলাইন পদ্ধতি কাজ না করে, তাহলে হাতে রয়েছে বিকল্প পথ—পাসপোর্ট অফিসে সরাসরি যোগাযোগ, পুলিশ ভেরিফিকেশন অবস্থা যাচাই, কিংবা কাস্টমার কেয়ারের সহায়তা নেওয়া। তাই কখনোই হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই।