ভ্রমণকারীদের জন্য PST সময় অঞ্চল: যাত্রার আগে যা জানা দরকার

পৃথিবীতে সময় গণনার জন্য একটি সাধারণ রেফারেন্স ব্যবহার করা হয়। একে বলা হয় UTC। এটাকে ধরা হয় শূন্য বিন্দু। বাকি সব সময় অঞ্চল এই বিন্দুর সাথে যোগ বা বিয়োগ করে গণনা করা হয়।
PST মানে Pacific Standard Time। এটি UTC থেকে ৮ ঘণ্টা পিছিয়ে। শীতকালে উত্তর আমেরিকার পশ্চিম অংশে এই সময় চালু থাকে। গ্রীষ্মকালে চালু হয় PDT বা Pacific Daylight Time, যা UTC থেকে ৭ ঘণ্টা পিছিয়ে। পার্থক্য হয় কারণ অনেক দেশে বছরে দু’বার ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে বা পিছিয়ে দেওয়া হয়।
PT হল একটি সাধারণ নাম, যা দিয়ে পুরো প্যাসিফিক অঞ্চলের সময় বোঝানো হয়। শীতে PT মানে PST, আর গ্রীষ্মে PT মানে PDT।
কোথায় ব্যবহার হয় PST
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পশ্চিম অংশে এই সময় অঞ্চল চালু থাকে। শহরগুলো যেমন সান ফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস, সিয়াটল, ভ্যাঙ্কুভার — এগুলো সব PST time বা PT তে চলে। বিমানের টিকিট, অফিসিয়াল মেইল, বা কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করা হলে এই অঞ্চলগুলো বোঝানো হয়।
PST আর বাংলা সময়ের পার্থক্য
ঢাকায় সময় UTC+6 এবং কলকাতায় UTC+5:30।
- শীতকালে PST ঢাকার থেকে ১৪ ঘণ্টা পিছিয়ে এবং কলকাতার থেকে ১৩.৫ ঘণ্টা পিছিয়ে।
- গ্রীষ্মে এই ব্যবধান এক ঘণ্টা কমে যায়।
এটাই সব হিসাবের ভিত্তি।
প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে ভ্রমণ
যদি তুমি ঢাকায় থেকে সান ফ্রান্সিসকো যাও, যেমন টোকিও হয়ে, তাহলে দেখা যাবে গন্তব্যে পৌঁছানোর পর ক্যালেন্ডারে তারিখ আগের দিনের মতো দেখাচ্ছে। এটা হয় আন্তর্জাতিক তারিখ পরিবর্তন রেখার কারণে। বিভ্রান্তি এড়াতে, কেবল যাত্রার সময়কাল আর স্থানীয় পৌঁছানোর সময় দেখো। এতে মাথা সহজে মানিয়ে নেয়।
সময় কিভাবে হিসাব করবে
শীতকালে: PST + ১৪ ঘণ্টা = ঢাকা। গ্রীষ্মে: PST + ১৩ ঘণ্টা = ঢাকা। কলকাতার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট যোগ করতে হবে।
উদাহরণ: জানুয়ারিতে সান ফ্রান্সিসকোতে সকাল ১০টায় কোনো মিটিং থাকলে, ঢাকায় সেটা হবে পরদিন রাত ১২টা এবং কলকাতায় রাত ১১:৩০। জুলাই মাসে একই মিটিং হলে, সেটা হবে ঢাকায় রাত ১১টা এবং কলকাতায় রাত ১০:৩০।
শরীরের ঘড়ির প্রভাব
১৩–১৪ ঘণ্টার সময় পার্থক্য শরীরের ঘড়িকে অস্বস্তি করে তোলে। মানিয়ে নিতে আগেভাগে প্রস্তুতি দরকার। ভ্রমণের ৩ দিন আগে ঘুমের সময় এক ঘণ্টা করে সরাও। সকালের আলো শরীরকে নতুন সময়ে মানাতে সাহায্য করে। প্রথম দিন দুপুরের পর থেকে সক্রিয় থাকো। বিকেলের পর কফি এড়াও। ছোট দুপুরের ঘুম (২০ মিনিট পর্যন্ত) উপকারী, কিন্তু দীর্ঘ ঘুম পুরো রাতকে নষ্ট করে দিতে পারে।
কাজ ও সময়সীমা
অনেক কাজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের জমাদানের শেষ সময় PT অনুযায়ী দেওয়া হয়। যেমন — “11:59 PM PST।” এক ঘণ্টার ভুলও সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
উদাহরণ: শীতকালে সোমবার রাত ১১:৫৯ PST মানে ঢাকায় মঙ্গলবার দুপুর ১:৫৯ এবং কলকাতায় দুপুর ১:২৯। গ্রীষ্মকালে সময় অন্য রকম হবে।
তাই সবসময় ঘটনাকে দুটো সময়ে লিখে রাখো — PT আর তোমার স্থানীয় সময়।
পরিবারের সাথে যোগাযোগ
সকালে ক্যালিফোর্নিয়া আর সন্ধ্যায় ঢাকা — এই সময়টা কথোপকথনের জন্য ভালো। কলকাতার ক্ষেত্রে আধ ঘণ্টা যোগ করতে হবে। সাপ্তাহিক ছুটিতে উল্টো করে নেওয়া যায়: ঢাকায় ভোর আর সান ফ্রান্সিসকোতে দুপুর।
সরকারি অফিস ও সময়
কনসুলেট, হাসপাতাল, ব্যাংক বা অফিসের স্লট PST অনুযায়ী খোলে। ঢাকায় সেটা রাত বা গভীর সন্ধ্যা। এই সময়ে লগইন করলে খালি সময় পাওয়ার সুযোগ বেশি থাকে।
পরিবহন আর সময় পরিবর্তন
যেদিন ঘড়ির কাঁটা বদলানো হয়, তখন বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়। শরতে একই ঘণ্টা দুইবার আসে, আর বসন্তে একটি ঘণ্টা বাদ পড়ে। ট্রেন বা বাসে টিকিটে সবসময় লেখা থাকে PST বা PDT। সেটা ভালোভাবে পড়া দরকার।
অর্থ ও লেনদেন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ব্যাংক এবং অনলাইন লেনদেন PST অনুযায়ী চলে। ঢাকায় তখন দিনের বেলা হয়। ফলে অনেক নোটিফিকেশন সুবিধাজনক সময়ে আসে। তবে কিছু কোড দ্রুত মেয়াদ শেষ করে। বড় লেনদেনের জন্য ভালো সময় হলো PST অনুযায়ী সকাল।
সীমান্ত ভ্রমণ
সিয়াটল ও ভ্যাঙ্কুভারে একই সময়। সান ডিয়েগো ও টিহুয়ানাতেও একই ছন্দ। ফলে গাড়ি, বাস বা ট্রেনে সীমান্ত পার হওয়া সহজ হয়।
ভ্রমণকারীর জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকা
- PST না PDT চলছে, সেটা আগে যাচাই করো।
- সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ দুই সময়ে লিখো।
- ঘড়িতে দুটি ডায়াল রাখো।
- ভ্রমণের কয়েক দিন আগে ঘুম এক–দুই ঘণ্টা সরাও।
- বিমানে এমন আসন নাও যাতে প্রথম ঘুম রাতের সময় হয় PT অনুযায়ী।
- মিটিং দুপুরের পর রাখো স্থানীয় সময়ে।
- ডেডলাইন সাথে সাথে স্থানীয় সময়ে রূপান্তর করো।
- সময় পরিবর্তনের দিনে রাতের যাত্রা এড়াও।
- পরিবারের সাথে কথা বলার জন্য রাখো দুটি সময়: সকাল PT আর সন্ধ্যা ঢাকা।
- প্রশান্ত মহাসাগর পেরোবার সময় পৌঁছানোর সময় দেখো, তারিখ নয়।
যাত্রাপথের ধরন
মধ্যপ্রাচ্য হয়ে গেলে তারিখ স্বাভাবিকভাবে এগোয়। কিন্তু পূর্ব এশিয়া হয়ে গেলে অনেক সময় মনে হয় দিন পিছিয়ে গেছে। শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো ঘুম ও জাগার ঘণ্টা। স্থানীয় সকালের আলো, খাবারের সময়, আর সন্ধ্যার পর সানগ্লাস ব্যবহার করে শরীর নতুন সময়ের সাথে খাপ খায়।
দৈনন্দিন পরিকল্পনা
যদি কাজের চাপ বেশি হয়, দিনটিকে ভাগ করো। সকালে গভীর কাজ, দুপুরের পর এশিয়ার সাথে যোগাযোগ, সন্ধ্যায় বিশ্রাম। বারবার একই সময়ে মিটিং রাখলে সবার জন্য সহজ হয়।
অনুষ্ঠান ও বিনোদন
কনসার্ট, ম্যাচ, সিনেমা — এগুলোতে সময় লেখা থাকে “7 PM PT।” ঢাকায় সেটা শীতে পরদিন সকাল আর গ্রীষ্মে সন্ধ্যা। হিসাব করার নিয়ম: ঢাকায় শীতে PT+14, গ্রীষ্মে PT+13। কলকাতায় শীতে PT+13:30, গ্রীষ্মে PT+12:30।
স্থানীয় ভ্রমণ
সান ফ্রান্সিসকো থেকে টরন্টো ফ্লাইট মানে অন্য সময় অঞ্চলে যাত্রা। বিভ্রান্তি এড়াতে সময় দুটোই লেখো — উড্ডয়নের স্থানীয় সময় আর অবতরণের স্থানীয় সময়। একই কৌশল ট্রেন বা বাসের ক্ষেত্রেও কাজে লাগে।
প্রয়োজনীয় সামগ্রী
ঘুমানোর মাস্ক ও কানে ঢোকানোর প্লাগ সাহায্য করে। পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে সকাল তাড়াতাড়ি উজ্জ্বল হয় এবং শব্দও শুরু হয় ভোরে। শরীর মানিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত এগুলো কাজে আসে।
ফোনকলের উদাহরণ
ডিসেম্বরে ভ্যাঙ্কুভারে রাত ৯টায় ফোন করলে কলকাতায় হবে পরদিন সকাল ১০:৩০। মার্চে সেটা হবে সকাল ৯:৩০। ঢাকার জন্য শীতে সকাল ১১টা আর গ্রীষ্মে সকাল ১০টা।
উপসংহার
PST মানে শুধু টিকিটে লেখা তিনটি অক্ষর নয়। এটা পশ্চিম আমেরিকার জীবনের ভিত্তি। PDT-র সাথে মিলে তৈরি করে PT। UTC-র সাথে এর পার্থক্য জানো, ঢাকার ও কলকাতার সাথে ব্যবধান মাথায় রাখো, মৌসুমী পরিবর্তন মনে রাখো। সব কাজ দুই সময়ে লিখো, টিকিট পরীক্ষা করো, আর ঘুমের ছন্দ আগেই বদলাও। তাহলে যাত্রা, কাজ আর বিশ্রাম সব সহজ হবে, আর পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে না।